এমবাপ্পের জোড়া গোলে কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্স

কিলিয়ান এমবাপ্পের জোড়া গোলে ভর করে কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। রোববার রাতে শেষ ষোলোর লড়াইয়ে তারা ৩-১ গোলে পোল্যান্ডকে পরাজিত করে। বিজয়ী দলের হয়ে অপর গোল করেন অলিভার গিরুদ। তবে ইনজুরি টাইমের শেষ মিনিটে পেনাল্টি থেকে একটি গোল পরিশোধ করেন পোল্যান্ডের রবার্ট লিওয়ানদোস্কি। অন্যদিকে শেষ ষোলোর লড়াইয়ে সেনেগালকে ৩-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে ইংল্যান্ড। এর ফলে সেমিফাইনালে উঠার লড়াইয়ে ইংল্যান্ডকে পাচ্ছে ফ্রান্স।

রোববার পোল্যান্ডের বিপক্ষে সতেজ একটি দলকে মাঠে নামান ফ্ররাসি কোচ দিদিয়ে দেশ্যম। তিউনিশিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ০-১ গোলে পরাজিত হওয়া দলটিতে আনেন ৯টি পরিবর্তন। মূলত আগের ম্যাচটিতে রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড়দেরকেই পরখ করে দেখেছেন তিনি। এদিকে আর্জেন্টিনার কাছে ০-২ গোলে হেরে যাওয়া গ্রুপ ম্যাচের একাদশে পোলিশ দলটির দুটি পরিবর্তন আনেন কোচ সিজিল মিশিনিউইচ।

ম্যাচের শুরুতেই আক্রমণে যায় ফ্রান্স। মাঠে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা চতুর্থ মিনিটেই পেয়ে যায় ফ্রি কিক। পোস্টের বাইরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থেকে আঁতোয়ান গ্রিজম্যানের নেয়া শটটি অবশ্য লক্ষ্যভ্রস্ট হয়। ৭ মিনিটে গোছানো একটি প্রতিআক্রমণ রচনা করে পোল্যান্ড। এই সময় বাঁ প্রান্ত দিয়ে ফরাসি বক্সে ঢুকে পড়া ম্যাটি ক্যাশের বাঁকানো শটের বলটি সরাসরি আশ্রয় নেয় গোলরক্ষক হুগো লোরিসের হাতে। যিনি ম্যাচে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নাম লিখিয়েছেন ফরাসি ফুটবলের রেকর্ড বইয়ে। ফরাসি এই অধিনায়কের এটি ছিল দেশটির হয়ে সর্বোচ্চ ১৪২তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এর আগে ফ্রান্সের হয়ে সমান ম্যাচ খেলে এককভাবে ওই রেকর্ডের মালিক ছিলেন কিংবদন্তী ডিফেন্ডার লিলিয়ান থুরাম।

১২ মিনিটে পোলিশ শিবিরে আতংক ছড়ান কিলিয়ান এমবাপ্পে। বাঁ প্রান্ত দিয়ে ঢুকে তিনি শট নিলে সেটি আড়াআড়িভাবে এগিয়ে আসা ওসমানে ডেম্বেলের কাছে পৌঁছানের আগেই ফিরিয়ে দেন পোলিশ গোলরক্ষক ওজিনে সিজিসনি। ২ মিনিট পর ডি বক্সের বাইরে থেকে অরেলিয়েন টিচুয়ামেনির বুলেট গতির শটটি ফিরিয়ে দেন পোলিশ গোলরক্ষক। ম্যাচের প্রথম ১৫ মিনিট একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করেছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। এ সময় ম্যাচের ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করা লেস ব্লুজদের হয়ে ডেম্বেলের আরো একটি প্রচেস্টা রুখে দেন পোলিশ গোলরক্ষক।

ম্যাচের ২২ মিনিটে পোল্যান্ডের হয়ে ফরাসি গোলরক্ষক লোরিসের পরীক্ষা নেয়ার চেস্টা করেন স্ট্রাইকার রবার্ট লিওয়ানদোস্কি। তবে ডি বক্সের বাইরে থেকে নেয়া তার জোড়ালো শটের বল পোস্টের সঙ্গে ব্যবধান রেখে বাইরে চলে যায়। এরপর থেকে অবশ্য কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেস্টা করে পোল্যান্ড। বেশ কয়েকটি ব্যর্থ আক্রমণও করে তারা। তবে ৩১ মিনিটে গোলের দারুণ একটি সুযোগ সৃস্টি করে ফ্রান্স। এ সময় ডেম্বেলে নিখুঁত ভাবে একটি বল ক্রস করেন সতীর্থ গিরুদের উদ্দেশ্যে। তখন একেবারে ফাঁকায় ছিল পোলিশ বক্স। কিন্তু গিরুদের নেয়া শটের বল সাইডবারের পাশ দিয়ে বাইরে চলে যায়।

ম্যাচের ৩৩ মিনিটে প্রিজিমিসল ফ্রাঙ্কোভস্কিকে ডি বক্সের বাইরে ফেলে দিয়ে হলুদ কার্ড দেখেন টিচুয়ামেনি। এর জেরে পাওয়া ফ্রি কিক থেকে শট নেন লিওয়ানদোস্কি। কিন্তু বলটি প্রতিরক্ষা দেয়ালে লেগেই ফিরে আসে। ৩৯ মিনিটে পিওটর জিয়েলিনিস্কির শটের বল তালুবন্দী করেন ফরাসি গোলরক্ষক লোরিস।

শেষ পর্যন্ত ৪৪ মিনিটে গোলের দেখা পায় ফ্রান্স। এই সময় মাঝমাঠ থেকে কিলিয়ান এমবাপ্পের বাড়িয়ে দেয়া বলটি নিয়ে দক্ষতার সঙ্গে ডি বক্সে গিয়ে প্লেসিং শটে জালে জড়িয়ে দেন তিনি। ফলে ফ্রান্সকে ১-০ গোলে এগিয়ে দেয়ার পাশাপাশি দেশের হয়ে রেকর্ড গোলদাতার তালিকায়ও নাম লেখান ৫২ গোলের মালিকানা পাওয়া গিরুদ। পরে ১-০ গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। পোল্যান্ডের হয়ে এক গোল পরিশোধ করেন লিওয়ানদোস্কি।

বিরতি থেকে ফেরার পরও আক্রমণের ধারা অব্যাহত রাখে ফ্রান্স। ৫৭ মিনিটে ডেম্বেলে, ৫৯ মিনিটে গিরুদ এবং ৬২ মিনিটে আতোয়ান গ্রিজম্যান আক্রমণ চালিয়ে নাস্তানাবুদ করে দেন পোলিশ রক্ষণকে। শেষ পর্যন্ত ৭৪ মিনিটে ফের গোলের দেখা পায় ফ্রান্স। এ সময় গিরুদের চমৎকার একটি যোগান থেকে ডি বক্সের মধ্যে বল পেয়ে বেশ ধীরস্থিরভাবে দারুন শটে বল জালে জড়ান পিএসজি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে (২-০)। মুহূর্তেই বাঁধভাঙ্গা উচ্ছেসে ফেটে পড়ে ৪৪ হাজার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামে উপস্থিত প্রায় ৪১ হাজার দর্শক। ম্যাচের ইনজুরি টাইমে ফ্রান্সের হয়ে তৃতীয় এবং নিজের দ্বিতীয় গোল করেন এমবাপ্পে। বদলী হিসেবে আসা থুরামের যোগান থেকে বল পেয়ে পেনাল্টি বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের বাঁকানো শটে জালে জড়ান এমবাপ্পে। তবে ইনজুরি টাইমের ৯ মিনিটে পেনাল্টি থেকে একটি গোল পরিশোধ করেন পোলিশ স্ট্রাইকার রবার্ট লিওয়ানদোস্কি। ফলে ৩-১ গোলের জয় নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে ফ্রান্স। এর আগে সর্বশেষ পাঁচটি শেষ ষোলোর ম্যাচেই জয়ী হয়ে শেষ আটের টিকিট লাভ করেছিল লেস ব্লুজরা। উল্লেখ্য বিশ্বকাপের একটি মাত্র ম্যাচে ফ্রান্সের বিপক্ষে জয়লাভ করেছিল পোল্যান্ড। ১৯৮২ সালে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী প্লে অফ ম্যাচে ৩-২ গোলে জয়লাভ করেছিল তারা।

Rent for add

সর্বশেষ নিউজ

for rent