স্বাধীনবাংলা ফুটবল দলকে সংবর্ধনা দিয়েছে বাফুফে


মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্বাধীনবাংলা ফুটবল দলকে সংবর্ধনা দিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বুধবার বাফুফে ভবনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিতত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি।

প্রধান অতিথির ভাষনে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি বলেছেন, দেশের স্বাধীনতার জন্য ফুটবল দল গঠণ এবং সেই ফুটবল দল ম্যাচ খেলে অর্থ সংগ্রহ করে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রদান করা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। বুধবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) আয়োজিত স্বাধীনবাংলা ফুটবল দলকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কথাগুলো বলেছেন প্রতিমন্ত্রী।

ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেছেন,‌ ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশের একটি ফুটবল দল দেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত অর্জন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যার্থে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শনী ফুটবল খেলায় অংশ নেয়। এই দলটি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল নামে পরিচিত ছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে যুদ্ধকালীন প্রথম ফুটবল দল এটি।’


বাফুফে ভবনে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষঠানে প্রতিমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বীর শহীদদের ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা গৌরবোজ্জ্বল অবদান রেখে লাল সবুজের পতাকাকে সর্বপ্রথম দেশের বাইরে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছিলেন সেই স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সময়ের সাহসী সন্তানদের।’

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল অবিচ্ছেদ্য এক অংশ উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশের ক্রান্তিকালে বল পায়ে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ফুটবলাররা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা উঠলে তাই স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের নাম উচ্চারিত হবেই। বছরের পর বছর নির্যাতিত-নিষ্পেষিত বাঙালি জাতির ওপর বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর শোষণ চলছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় আসে। নয় মাস স্থায়ী এ যুদ্ধে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল বয়সের সব পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ফুটবল খেলে দর্শকদের বিনোদন দেয়া যাদের কাজ ছিল তারা সে উত্তাল সময়ে বসে থাকেনি। পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে খেলার মাঠে সৃষ্টি করেছিল মুক্তিযুদ্ধের আরো একটি ফ্রন্ট। দেশকে শত্রু মুক্ত করতে তাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল স্বাধীনতার শ্লোগান। বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নিতে দৃঢ় কঠিন প্রতিজ্ঞা নিয়েই দেশের একঝাঁক তরুণ ফুটবলার গঠন করেছিলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। তাঁদের হাতে হয়তো অস্ত্র ছিল না, কিন্তু মহান মুক্তিযুদ্ধে পায়ের ফুটবলটাই হয়ে উঠেছিল অস্ত্রের মতো ধারালো। তাঁদের খেলার মধ্যেই মিশে ছিল প্রতিবাদের ভাষা। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের পতাকাতলে এই ফুটবলাররা পশ্চিম বাংলা, বিহার, বেনারস, মুম্বাইসহ ভারতের বিভিন্ন শহরে ১৭ টি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলে ১৬ লাখের বেশি ভারতীয় রুপি মুক্তিযুদ্ধের তহবিলে দেয় দলটি। দেশের স্বাধীনতার জন্য ভিনদেশে প্রীতি ম্যাচ খেলে অর্থ সংগ্রহ বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনেই বিরল।’

তৎকালীন অস্থায়ী সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যার্থে অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে যে কয়েকজন তরুণ ফুটবলার স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠন করেছিলেন তারা সবসময়ই জাতির কাছে অত্যন্ত গৌরবের পাত্র হিসেবে বিবেচিত হবেন। কেবল ঢাকার খেলোয়াড়ই নয়, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক তরুণ খেলোয়াড়ই তখন সীমান্ত থেকে এসে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলে যোগ দিয়েছিলেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর ফুটবলারদের এই অবদানের কথা বাঙালি জাতির ইতিহাসে চিরদিন অম্লান হয়ে থাকবে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি জাতি শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করবে ফুটবল মুক্তিযোদ্ধাদের।

অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব পরিমল সিংহ, বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন, নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহফুজা আক্তার কিরণ, সাধারণ সম্পাদক মো. আবু নাইম সোহাগসহ অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

Rent for add

সর্বশেষ নিউজ

for rent