স্কুল ফুটবলকে আন্তর্জাতিক রূপ দেবার স্বপ্ন দেখছেন বিজন বড়ুয়া

জাতীয় স্কুল ফুটবল নিয়ে কাজ করছেন ঘরোয়া ফুটবলের এক সময়ের জনপ্রিয় গোলরক্ষক বর্তমানে বাফুফে নিবার্হী সদস্য বিজন বড়ুয়া। দু’‌দফা জাতীয় স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে ইতোমধ্যে তিনি তার সাংগঠনিক যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। ভবিষৎতে তিনি এই স্কুল ফুটবলকে আন্তর্জাতিক রূপ দেবার স্বপ্ন দেখছেন। স্কুল ফুটবলের নানান প্রসঙ্গ নিয়ে কক্সবাজারের ছেলে বিজন বড়ুয়া কথা বলেছেন ফুটবলবাংলাদেশ.কম-এর সঙ্গে। 

ফুটবলবাংলাদেশ : জাতীয় স্কুল ফুটবল নিয়ে আগ্রহী হলেন কীভাবে?

বিজন বড়ুয়া : ২০১৭ সালের কথা। হঠাৎ একদিন সালাউদ্দিন ভাই (বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন) বললেন, বিজন তোমাকে স্কুল ফুটবলের দায়িত্ব দিতে চাচ্ছি পারবে তো? উনার এককথাই রাজি হয়ে গেলাম। কারণ এ স্কুল ফুটবল থেকেই আমার বেড়ে উঠা। আমি মনে করি, স্কুল ফুটবলই একজন ফুটবলারের ক্যারিয়ার গড়ার প্রথম স্তম্ভ।

স্কুল ফুটবল, কলেজ ফুটবল, স্থানীয় টুর্নামেন্ট ও স্থানীয় লিগ এভাবেই ধাপে ধাপে একজন খেলোয়াড় সর্বোচ্চ লিগে উঠে আসেন। প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে জাতীয় দলেও খেলার সুযোগ করে নেন। তাই স্কুল ফুটবল নিয়ে আমার আগ্রহ একটু বেশিই। ওদের নিয়ে কাজ করতে খুব ইনজয় করি।

ফুটবলবাংলাদেশ : তো কীভাবে শুরু হলো আপনার এ মিশন?

বিজন বড়ুয়া : জাতীয় স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়ে এগুতে শুরু করলাম। বাফুফে (বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন) এবং ডিএসএ (জেলা ক্রীড়া সংস্থা) থেকে সর্বাত্বক সহযোগিতা পেলাম। অংশগ্রহণকারী স্কুলগুলোর উৎসাহ-উদ্দীপনা আমাকে আরো বেশি আত্নবিশ্বাসী করে তুললো। এভাবেই ২০১৭ ও ২০২০ সালে দুটি জাতীয় স্কুল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে ফেলি।

 

ফুটবলবাংলাদেশ : একটি প্রশ্ন রাখতে চাচ্ছি, আচ্ছা স্কুল ফুটবলের ভবিষৎ কী?

বিজন বড়ুয়া : চমৎকার প্রশ্ন করেছেন। আমরা কিন্তু স্কুলে পড়ুয়া খুদে ফুটবলারদের ভবিষৎ গড়তেই স্কুল টুর্নামেন্টের প্রচলন শুরু করেছি। যেখান থেকে আগামীদিনের তারকা ফুটবলার বেরিয়ে আসবে। প্রতিটি টুর্নামেন্টের সময়ই আমরা বাফুফে থেকে প্রতিটি ভেন্যুতে দক্ষ কোচ পাঠিয়ে থাকি। তারা প্রতিভাবানদের খুঁজে বের করেন। এর পর আমরা চূড়ান্তপর্বেও একই কাজ করি। টুর্নামেন্ট শেষে কোচদের দেয়া প্রতিভাবান ফুটবলারদের তালিকা ডেভেলপমেন্ট কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেই। তারাই পরবর্তীতে এসব খুদে খেলোয়াড়দের দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। বাছাইকৃত মেধাবী ফুটবলাররা তাদের যোগ্যতার মাপকাঠি দিয়েই ধাপে ধাপে অনূর্ধ্ব-১৫, ১৮, ১৯, ২৩ ও জাতীয় দলে খেলার পথ সুগম করে নেবার সুযোগ রয়েছে।

ফুটবলবাংলাদেশ : এ টুর্নামেন্টের ফরম্যাট সর্ম্পকে একটু জানাবেন কী?

বিজন বড়ুয়া : এটি মূলত অনূর্ধ্ব-১৬ বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট। দেশব্যাপী জাতীয় স্কুল টুর্নামেন্টের শুরুতে আমরা ৮টি ভেন্যুতে বাছাই টুর্নামেন্টের আয়োজন করি। সেখান থেকে প্রতিটি ভেন্যুর চ্যাম্পিয়ন দল নিয়ে ঢাকায় চূড়ান্তপর্ব অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে আমরা পার্টিসিপেশন মানি, জার্সী, ফুটবল সামগ্রী ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে থাকি। ২০১৭ সালে ৫৬টি ও ২০২০ সালে দেশের ৫৭টি স্কুল অংশগ্রহণ করেছে।

ফুটবলবাংলাদেশ : জাতীয় স্কুল টুর্নামেন্টের পর আপনার আর কোন পরিকল্পনা আছে কী?

বিজন বড়ুয়া : জাতীয় স্কুল টুর্নামেন্টের পাশাপাশি সবার সহযোগিতা নিয়ে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে মহানগরী স্কুল টুর্নামেন্ট আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। শুরুটা ঢাকা দিয়ে করতে চাচ্ছি। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিত হবে। ফুটবল উন্নয়নে নানারকম পরিকল্পনা থাকলেও এসব পরিচালনার জন্য পৃষ্ঠপোষকতা অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে বাফুফে সাধ্যমতো চেষ্টা করছে। তবে খেলাধুলাকে এগিয়ে নেবার জন্য সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো স্বতস্ফুতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

ফুটবলবাংলাদেশ : আপনার ফুটবল ক্যারিয়ারে কোনটি এখনো মনে দাগ কেটে আছে!

বিজন বড়ুয়া : দেখুন জাতীয় দলে আমার ফুটবল ক্যারিয়ার খুব সমৃদ্ধ নয়। ১৯৯১ সালে আমি একবারই অনূর্ধ্ব-২৩ জাতীয় দলে খেলেছি। এর পর দু’বার জাতীয় দলে ডাক পেয়েছি। একবার ইনজুরির জন্য সম্ভব হয়নি। আরেকবার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও দলে সুযোগ পাইনি। কেনো পাইনি, তা বলতে চাই না। কারণ এক. ফুটবলের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা। দুই. রুচির প্রশ্ন!

ফুটবলবাংলাদেশ : এবার একটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন, ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ লিগে বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেললেও সবাই আপনাকে মোহামেডানের বিজন হিসেবেই চেনেন কেনো?

বিজন বড়ুয়া : ঠিকই বলেছেন, সবাই আমাকে মোহামেডানের বিজন হিসেবেই বেশি চেনেন। কিন্তু কেনো এই বেশি চেনা সেটা আমি নিজেও জানিনা। হয়তো দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ক্লাব বলেই এটি হয়েছে। তবে মোহামেডান ছাড়াও আমি কিন্তু ওয়ারী, আরামবাগ, রহমতগঞ্জ, অগ্রণী ব্যাংক, মুক্তিযোদ্ধার হয়েও খেলেছি। ওইসব ক্লাবেও কিন্তু আমার সোনালী অধ্যায় রয়েছে।

ফুটবলবাংলাদেশ : স্কুল ফুটবল নিয়ে আপনার ভবিষৎ স্বপ্ন…

বিজন বড়ুয়া : স্কুল ফুটবলকে একটি দৃঢ়ভিতের উপর এখন দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি। এর পর মহানগরী স্কুল টুর্নামেন্ট শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। এসব টুর্নামেন্ট থেকে প্রতিভাবানদের নিয়ে ভবিষৎতে জাতীয় স্কুল ফুটবল দল গড়ে তুলবো। যারা ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন দেশের স্কুল টুর্নামেন্টে অংশ নেবে। এর পর দেশে আন্তর্জাতিক স্কুল টুর্নামেন্ট প্রচলনের স্বপ্ন রয়েছে। স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

 

Rent for add

সর্বশেষ নিউজ

for rent